ভালোবাসা নাকি ভালো লাগা
ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা
মোঃ হাসনাত বিন (আজিজ)
(এই গল্প সম্পূর্ন সত্য ঘটনা
অবল্ম্বনে)
(বাস্তবে (রাতুল ও নিলা
) এর চরিত্র নেই )
(কোন ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে
দেখবেন )
জীবনে চলতে চলতে
আজ এমন এক পর্যায়ে এ চলে এসেছে না আছে হাসিখুশি না আছে কারো দুঃখ আজ চিন্তা করছি সে
থাকুক বা না থাকুক
জীবন জীবনের মত চলে
যাচ্ছে ।
যদি মানুষকে ভালোবাসার সঙ্গা দিতে বলে
তার অফুরন্ত সঙ্গা দিয়ে যেতে
পারবেন । তার
কোন শেষ নেই ।
কিন্তু ভালোবাসার সঙ্গা হলো আমার
কাছে যাকে ভালোবাসবে আজীবন
আকড়ে ধরে বেচে থাকা
। সে পাশে থাকুক বা না থাকুক , বেচে থাকুক বা মরে যাক । আসলে
ভালোবাসার মানুষের জায়গার দখল টা অন্য কোন মানুষকে দেওয়া যায় না ।প্রেমের মাঝে আসলে
কোন ভালোবাসা নেই । ভালোবাসা আর প্রেম সম্পূর্ন আলাদা দুই অনূভুতি । ভালোবাসা হলো কারো
সাথে আজীবন থাকার প্রতিক্ষা করা ইচ্ছা , সুখের সাথী , দুঃখের একজন সাপোর্টার ইত্যাদি
ইত্যাদি । আর প্রেম এতো শুধু মাত্র একটা অনূভুতি শুধুমাত্র চাওয়া আর কিছুই না । বয়সের
সাথে সাথে এসব অনুভূতি নিজ থেকে আপনা আপনি বদলাতে শুরু হয় ।
আজ থেকে ঠিক ৩ বছর আগের কথা কোন এক দুর্ঘটনাই
তাদের পরিচয় মেয়েটির নাম ছিল নীলা আর ছেলেটির নাম ছিল রাতুল । তারা একজন আরেকজন কে
কখনো দেখে নি জানতো না । ছেলেটির বাড়ি থেকে মেয়েটির বাড়ি কমেও ৮-১০ ঘন্টার পথ । বলতে
গেলে দুজন দুই জেলার মানুষ । মেয়েটির ফেসবুক জনিত কোন সমস্যার জন্য পরিচিত তাদের ।
কাজ শেষে তাদের তেমন আর কথা বার্তা হলো না । ঠিক সেদিন বিকেলে রাতুল তাকে আবার মেসেজ
করে কি অবস্থা এখন সব ঠিক আছে তো । নীলা বললো হ্যা সব ঠিকিই চলছে ।
এভাবে কথা বলতে বলতে কখন অনেকটা সময় চলে গেল
বলাও মুসকিল । রাতুলের আবার রাতে ছাদে যাওয়ার একটা অভ্যাস ছিল । সে ছাদে যাবে বলেই
শেষমেস বিদায় দিয়ে দিল ।
এভাবে তাদের দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল । একটা সময়
এসে তারা একজন আরেকজনের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে । রাতুল জানে না সেটা কি ভালোবাসা
ছিল নাকি ভালোলাগা । এভাবে তারা মেসেজ এ দীর্ঘক্ষন সময় একে অপরের সাথে মেসেজ এ কথা
বলত । তারা একে অপরের সাথে ভালো লাগা খারাপ লাগা , প্রিয় রঙ , প্রিয় জিনিষ ইত্যাদি
শেয়ার করতে শুরু করল।তাদের মাঝে বেশিরভাগই দুজনের মিল এসব বলতে বলতে কখন যে রাত পৌনে
১০ টা বেজে গেল জানাই হলো না । তাড়াতাড়ি নীলা কে বিদাই দিয়ে সে ছাদে উঠে পড়ল ।ছাদে
উঠে ভাবতে লাগল আর হাসতে লাগল আর ভাবতে লাগল
ইস!!! দুজনের মাঝে ইচ্ছাগুলো আর স্বভাব কতই
না মিল ।
আসলে বাস্তবে মানুষের আশা ,ইচ্ছা স্বপ্ন যতই
মিল হোক তারপরের কিন্তু এটা সত্যি মানুষের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত থেকেই যায় ।
এভাবে যেতে যেতে তাদের প্রায় ১০ দিন অতিক্রম
হয়ে গেল । রাতুল জানতে পারল মেয়েটি কোন রিলেশন এ নায় । যেহেতু রাতুল আর নীলার এখন ভালোই
সম্পর্ক রাতুল নীলা থেকে সরাসরি জিজ্ঞেসা করল সিঙ্গেল নাকি মেয়েটি হেসে উত্তর দিল,
হা হা হা হুমমমম কেন? রাতুল বললো না এমনিতেই । রাতুল আবার জিজ্ঞেস করল আচ্ছা এখনো সিঙ্গেল
কেনো? নীলা উত্তর দিল এমনিই কাঊকে ভালোবাসব না সরাসরি বিয়েই করে নিব ।
শুনে রাতুল কিছুক্ষন হাসল আর বলল বাহ ! ভালোই
তো আমিও অবশ্য এমন টা ভাবি বিয়ের পর বঊকেই ভালোবাসব ।
এভাবে দিনের পর দিন গড়াতে লাগল । একদিন রাতুল
বলল কিছু কথা ছিল । একটু বল দিতে পারবে? নীলা বলল হ্যা দিচ্ছি । রাতুল কথার শেষে তাকে
ভালোবাসে সেটা বলেই দিলো ।নীলা তখন কিছু বললো না বলল সে জানবে । এর কিছু দিন অতিক্রম
হওয়ার পর নীলাও রাতুল কে বলেই দিল সে ও তাকে ভালোবাসে ।এবং রাতুল এটাও বলল যে তাদের
ভালোবাসা ফ্যামিলি না মানলেও পালিয়ে যাবে না । দরকার এ তারা ফ্যামিলিকে মানানোর চেষ্টা
করবে । নীলাও সেই কথায় রাজি হলো
এভাবে
তাদের সম্পর্ক চলতে চলতে ১ মাসে পূর্ন হলো । রাতুন তাকে যতেষ্ট সম্মান করত।এমনকি তারা
দুজনে দুজনকে এতটাই বিশ্বাস করত যে এই যুগে এসেই তারা আইডি পাসওয়ার্ড এর সেই খেলা খেলত
না । রাতুললের জন্মদিনে রাতুল চেয়েছিল সর্বপ্রথম উইশ সে নীলা থেকেই পাবে । নাহ সেদিন
নীলার জরুরি কোন কারনে উইস পায় নি । শেষে রাতে রাতুন নিজ থেকেই বলল আজ আমার জন্মদিন
তারপর সে বলব ও হ্যা হ্যাপি বার্থড়ে। রাতুল তার উইস শুনে বলল ধন্যবাদ ।
এভাবে ভালোই যাচ্ছিল তাদের দিন কাল তাদের সম্পর্কের
৩ মাস চলছে । ছেলেটার ফ্যামিলির তখন অবস্থা খারাপ বাবাও তেমন ভালো চাকরি করত না । মধ্যবিত্ত
একটা ফ্যামিলি রাতুলের । বাস্তবতার সাথে যেন পেরে উঠা অনেক কষ্টের রাতুলের তা হারে
হারে বুঝতে শিখছে । রাতুল না পেরে একটা চাকরি ঠিক করল । চাকরির মাঝে নীলাকে তেমন সময় দিতে পারত না । তারপর
ও রাত ১০-১১ টাই চাকরি থেকে বের হয়েই আগে নীলাকেই কল দিত প্রায় ১ ঘন্টা কথা বলার পরেই
বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিত সে । এভাবে চলল আরো ১ টি মাস । নীলাও অবশ্য রাতুলকে আর্থিক
দিকে অনেক টা সাহায্যে করত । মাঝে মধ্যে মোবাইলে টাকা পাঠানো বিকাশে হাত খরচ না চাইতেই
পাঠিয়ে দিত ।
এভাবে চলতে চলতে রাতুল একটা সময় বাস্তবতার সাথে
পেরে উঠতে না পেরে ডিপ্রেশন এ যেতে শুরু করে ।মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে নীলার সাথে
আঘাত করে কথা বলত । কিন্তু তা পরে ঠিক করে নিত । কেঊ বুঝুক না বুঝুক নীলা ঠিকিই বুঝে
নিতো হয়ত কোন সমস্যা পরে ঠিক হয়ে যাবে ।মাঝে মধ্যে নীলার অতিরিক্ত মেসেজে ও কলেও রাতুল
রাগান্বিত হয়ে নীলাকে গালি দিত । এরপর ও নীলা তা মেনেই নিত । পরে ঠিকিই রাতুল ভুল বুঝে
মাফ চেয়ে নিত ।
এভাবে যেতে যেতে সম্পর্ক টা ৫ মাসে পড়ল নীলার
বাড়িতে বিয়ের সমন্ধ আসতে শুরু করল নীলা বাড়িতে সোজাসুজি বলে দিল সে এখন বিয়ে করবে না
। সে আগে নিজের পায়ে দাড়াতে চাই এভাবে কয়েকটা বিয়ের সমন্ধ আসতে না আসতেই নীলা সরাসরি
বাড়িতে রাতুলের কথা বলেই দেয় । বলল সে একজন কে পছন্দ করে তার নাম রাতুল । যদি বেশি
চাপ দেয় বিয়ের সে রাতুল কে বলবে এবং রাতুল এর সাথে চলে যাবে । এবং রাতে সেই কথাটা রাতুলকেও
বলে । রাতুলের জীবনে তখন যাচ্ছে প্রচুর পরিমান ঝড় । সে কথাটা শুনেও হুউউউম বলে চুপ
হয়ে গেল । রাতুল কোন রকম বাস্তবতার সাথে পেরে উঠছে না । একসময় ঝগড়া,বিবাধ,তর্ক,বিতর্ক
লেগেই থাকত । রাত জেগে ছাদে উঠে কাদত প্রচুর পরিমানে ।
একদিন রাতে ১২টা কি সাড়ে ১২ টা নীলার সাথে খুব
কথা বলতে ইচ্ছা হচ্চে রাতুলের সে কল দিল । দেখে নীলা ফোনে ব্যস্ত সী টানা ৩০ মিনিট
ওয়েট করল ঠিক তখনও দেখে নীলা ফোনে ব্যস্ত । এর কিছু সময় পর নীলা রাগানিত্ব হয়ে বলল
এভাবে কল দিয়ার কি আছে কি সমস্যা । কথাটা শুনতে সত্যি খুব খারাপ লেগেছিল রাতুলের মাথায়
আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। যে মানুষটার জন্য সে সারাদিন কথা বলতে না রাতে এসে নিজের শরীর
বিছানা খুজতে চাওয়ার পড়েও বিছানায় না গিয়ে কথা বলার অপেক্ষা করছে সে মানুষটাই আজ তার
সাথে কড়া ভাষায় কথা বলেছে ।যাক সেদিন আর কথা হলই না ।
এভাবে চলতে চলতে আর আগের মত মেসেজ ও দেওয়া হয়
না সেদিন থেকে ।
টানা ১৩ দিন চলে গেল সে আর মেসেজ দিলো না রাতুল
ইচ্ছা থাকা সত্বেও দিল না । আসলে যে বয়সে হাসিখুশি ভাবে জীবন কাটানোর কথা সে বয়সে রাতুল
ডিপ্রেশন দায়িত্ব ইত্যাদি প্যারা নিয়ে বড় হচ্ছে ।সুসাইড করতে ভয় না পেলে হয়ত অনেক আগে
সুসাইড করে এই জঞ্জালময় শহর থেকে মুক্তি নিয়ে নিত । হঠাৎ ১৩ দিন পরে নীলার মেসেজ আর
খরব ও নিও না । নেওয়ার দরকার ও নায় ।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । আসলে বলতে গেলে আদো কি
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেটা রাতুলের জানা নে্।ভেবেছিল হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তাদের
ভিতর তখন ইগো কাজ করছিল সেটা হলো আগে আমি কেন ক্ষ্মা চাইব প্রতিবার । যেটার কারলে কোন
সস্পর্ক টিকে না সেটা তাদের জানা ছিল না ।
এভাবে দিন দিন টান কমতে শুরু হলো । কিছু দিন পর পর তবুও রাতুল না পারতে মাঝে মধ্যে
কল দিত। অনেক সময় ধরত অনেক সময় ধরেও না আজকাল । এভাবে আজ এমন একটা দিনে এসে পড়ল রাতুলের
না আছে কারো প্রতি পিছুটান না আছে কারো প্রতি ভালোবাসা ।
কিন্তু সত্য এটাই আজো রাতুল অপেক্ষায় থাকে নীলার।
ভাবতে থাকে হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে ।ফিরে আসলে আবার ভালোবাসবে। কিন্তু রাতুলের এটা জানা
নেই কিছুই আর ঠিক হবে না ।সময়ের সাথে সাথে কিছু সম্পর্ক দাফল হয়ে যায় ।
আসলে ভুলে যাওয়া বা ভুলে থাকা রাতুলের কাছে
আজো জানা হয়ে উঠল না এটা কি
“ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা ছিল”।
বিদ্রঃ কিছু কথা চাইলেও লেখা সম্বব হয়ে উঠে না
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন