এক তরফা ভালোবাসা

 

এক তরফা ভালোবাসা

 এক তরফা ভালোবাসা

 মোঃ হাসনাত বিন (আজিজ)

ছেলেটার নাম ছিল জাহিদ তার ঠিক পাশের বাসায় একটা মেয়ে থাকত নাম তার মিম তারা দুজনেই খুব ভালো বন্ধু , বলতে গেলে একজন আরেক জনকে ছাড়া চলেই না

একদিন জাহিদ মজার ছলে মিমকে বলল,শুন মিমআমি তোকে ভালোবাসিসাথে সাথে মিম উত্তর দিল,শুন জাহিদ তুই আর আমি শুধুই বন্ধু এর বেশি কিছু না বলেই মিম চলে গেল এভাবে শুনে নিজেকে আটকাতে পারলাম না চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ মিমের ফোন হঠাৎ করেই মাঠে ডেকে পাঠাল জাহিদকেগিয়েই জাহিদ জিজ্ঞাসা করল কিরে মিম হঠাৎ জরুরি ডাকা? মিমে উত্তর দিল সামনে পরীক্ষা আসছে তায় খুব টেনশন আছেসাথে সাথে জাহিদ বলে উঠে টেনশন করিস না তুই ফেল করলে আমিই তোকে বিয়ে করব আর টা ক্রিকেট খেলার টিম বানাব একটা দল তোর একটা দল আমারমিম রেগে গিয়ে তাকে গালে একটা জোরে থাপ্পড় মেড়ে বললতোকে জীবনে বন্ধু বানিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিআজই আমাদের জীবনে সবকিছু শেষবলেই চলে গেল

এইদিকে জাহিদের চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি পড়ছেসে কিছুই বুঝতে পারল নাখুব মন খারাপ লাগছে তারশেষ মেষ বন্ধুত্ব টাও শেষ?কেমন জানি স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছেতাও কিছু করার নাইঅশ্রু ভরা চোখ আর ভাঙা মন নিয়ে সে বাসায় আসলএসেই শুয়ে পড়লকাঁদতে কাঁদতে তার বালিশ ভিজে গিয়েছেপুরানো স্মৃতি গুলো মনে পড়ছেকত কল,কত মেসেজ ইত্যাদি ইত্যাদিঅবশ্য জাহিদের সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে দিলেও জাহিদ আগের মতো ফোন দিতএতে মিম খুবই বিরক্তি অনূভব করতোমিম বিরক্ত হলেও জাহিদ সব সময় মিম এর সাথেই কথা বলতে চাইতহঠাৎ একদিন জাহিদ দেখল,মিম পার্কে বসে রাইহান নামের ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেতা দেখেয় জাহিদের বুকটা ভিতরে ফেটে যাচ্ছেতাই সে বাসায় এসে পড়লবাসায় এসে তার বুকটা ব্যথা করছে খুব

তাই ভাবল সে মিমিকে একটা ফোন দিবেঅনেকবার কল দেওয়ার পরে কল রিসিভ করেজাহিদ বলে তার বেশি বুকে ব্যথা করছেমিম তাকে বলে সে কি করতে পারেব্যথার ওষুধ খেয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবিজাহিদ তাকে জিজ্ঞাসা করল কয়টা খাবো ব্যথার ওষুধমিম তাকে বলে তোর যতটা খুশি খা এবং তার সাথে রাগারাগি আর বাজে ব্যবহার করে ফোন কেটে দেয়জাহিদের মনে পড়ে যায় একসময় এই মিম মেয়েটা কতই না খবর নিত জাহিদেরএখন আর নেয় নাআর এখন তেমন কথাও হয় নাআগের মত আর তার কাছে সাহায্যে চায় নাহঠাৎ বুকের ব্যথ্যা আবার বেড়ে গেলবুকে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল জাহিদরাতে সে বুকে ব্যথার কারনে কয়েকটা নাপা একসাথে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েপরদিন সকালে মিম খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে যাক আজ জাহিদে কল দিল না মেসেজ দিল নাউঠেই ফ্রেস হয়ে সে পড়ায় মনোযোগী হয়ে পড়ে

পড়তে পড়তে অনেকক্ষন পড়ার পরেও জাহিদের কোন কল আসে নাতখন মিম মনে মনে বলতে লাগল,যাক ভালোই হয়েছে ছেলেটা একটা বোরিং,কোন কমন সেন্স নায়,মিম এইটা হয়েছে ওইটা হয়েছে কত কি বলতে থাকে সারাদিনকয়েকঘন্টা কেটে যাওয়ার পরেও মিমের মোবাইলে জাহিদের মেসেজ বা কল কিছুই আসে নাএইবার মিমের ফোনে রিং বেজে উঠল,দেখা গেল সিম কোম্পানির কল,এই বার মিমের সত্যি সত্যি কেমন জানি খারাপ লাগছে ঘড়ির ঘন্টার কাটা ক্রমই বেড়ে চলছেকিন্তু একটি বারের জন্য জাহিদের ফোন থেকে মিমের কাছে কল আসে নামিমের মনে পড়ে গত দিনের কথাজাহিদ তাকে বলেছিল বুকে ব্যথামিমের সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে যায় এবং বুকে ভিতরে খা খা করে উঠে কত রকম ভয় করছেযাই হোক প্রায় রাত নয় টা বেজে গেছে

এইবার আর মিম পড়তে বসলেও পড়তে পারছে না,বারবার জাহিদের কথা মনে পড়ছেমিম নিজেকে এই কথা বলে তার তো জাহিদকে বোরিং লাগে তারপর কেন সে জাহিদকে খুঁজছেকিছু না ভেবেই জাহিদকে ফোন দেয়ফোন ক্রমশ বাজতে বাজতে তার ছোট ভাই রাকিব ফোন রিসিভ করেরিসিভ করতেই তার ছোট ভাই কাঁদো কাদো কণ্ঠে বলে জাহিদ বাইরে আছে বন্ধুদের সাথে পরে ফোন দিতেমিম জিজ্ঞাসা করে রাকিব কাঁদো কাঁদো সুরে কেন কথা বলছে?রাকিব উত্তর দেয় তার বাড়ির একজন মুরব্বি মারা গেছে যার কারনে সে কেঁদেছিল তাই কণ্ঠ এমন লাগছেফোন রাখার আগে রাকিব মিম কে বলে পরীক্ষা যেন ভালোই হয়মিম বলে জাহিদ আসলে যেন রাকিব মিমের কথা রাকিব কে বলেমিম কিছুই বুঝে উঠতে পারছে নাপরীক্ষা কথা মনে পড়তেই মিম আবার পড়তে বসে যায়পড়তে ইচ্ছা না করলেও জোর করে পড়ছে

একসময় পড়তে পড়তে মিম ঘুমিয়ে পড়েতখন সে ঘুমের স্বপ্নে দেখে কে যেন তাকে ডাকছে এবং চিৎকার করে বলছে মিম ভালোবাসিস?কন্ঠটি পরিচিত কিন্তু ধরতে পারছে নাআজ মিমের ঘুম কাক ডাকার আগেই ভেঙ্গে গিয়েছেমিমের চোখে মুখে ভয়মিম ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জাহিদে কোন কল বা মেসেজ করেছে কিনামিম এইবার চায় জাহিদের একটা কল আসুক,মেসেজ আসুক আর সেই নাম টা মোবাইলের স্কিনে ভাসুককিন্তু নামটা আর ভাসে নামিমের কেন জানি আজ প্রথম মনে হচ্ছিল সে জাহিদ কে ভালোবাসেমিম ভাবতে শুরু করে,ইশ যখন জাহিদ কে গিয়ে বলব ভালোবাসি সে কতই না খুশি হবেভাবতেই অবাক লাগছেএভাবে পরীক্ষা আর ব্যস্ততায় চলে দীর্ঘ কয়েকটা দিন

মিম এইবার ঠিক করে সে পরীক্ষা শেষ করেই জাহিদের বাড়ি চলে যাবেজাহিদের বাড়ি আর তাদের বাড়ি অল্প পথ তায় তেমন অসুবিধাও হয় নিজাহিদের বাসায় এসে ডাকতে জাহিদের ভাই বের হয়জাহিদের বাসায় এর আগেও এসেছিল তখন সবাই অনেক খুশি হয়েছিলআজ সেই খুশিটা কেন যেন নেয়তার ভাই তার দিকে কেমন এক নজরে তাকিয়ে আছেমিম জিজ্ঞেস করছে জাহিদ কই,তার ভাই বলল ভাইয়া সামনেই আছে মিম বলল সামনে কোথায় তাকে ডেকে আনতে,জাহিদের ভাই উত্তর দেয় সে আসতে পারবে নামিমের ইচ্ছা হলে সে জাহিদের সাথে গিয়ে দেখা করতে পারেমিম এখন রাজি হয়ে রাকিবের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে জাহিদের সাথেখেয়াল করছে তারা কবর স্থানের পথ ধরেই যাচ্ছেমিমেম মনে সন্ধেহ জাগতে লাগলসে জিজ্ঞেসা করতেই রাকিব উত্তর না দিয়ে তার পকেট থেকে বের করে একটা পুরানো হাল্কা ছেড়া কাগজ মিমের হাতে দিলকাগজটি খুলতেই বলে হ্যা এটা তো জাহিদের লেখা বলেই পড়তে শুরু করল

মিম কেমন আছিস রে?আশা করি তুই অনেক টা ভালো থাকবি রেভাইয়া অনেক বার তোকে আমার কথা জানাতে চেয়েছিল আমার অবস্থা ভালো নাকিন্তু তোর পরীক্ষার আমি এমনিতেই অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলেছি তাই আর ক্ষতি করতে চায়নিআশা করছি পরীক্ষা ভালো হয়েছে তোর সরি আমিতো আর তোর সাথে দেখা আর কথাও বলতে পারব নাসম্ভবত তুই আমার কবরের আশে পাশেই আছিসজানিনা কোন খানে কবর দেওয়া হয়েছেইচ্ছা ছিল মসজিদের সাইডে দেওয়ালের সাথেই আমার কবর হতোতবে আমি এই ভেবে খুশি হয়েছি যে তোকে আর ডিস্টার্ব করব নাতুই শান্তিতে থাকতে পারবি অনেকআমাকে ক্ষমা করে দিস রে অনেক বিরক্ত করেছি তোকেআর হ্যা রায়হান অনেক ভালো আর হ্যান্ডসাম একটা ছেলে অনেক ভালো মানিয়েছে তোর সাথেসেদিন পার্কে তোদের দুজনকে একসাথে দেখেছিলামখুব খুশি লেগেছিল আমারআবার রাগ হয়েছিল তোদের দুজনের উপরআর সরি রে তোকে অনেক জ্বালিয়েছিআর হ্যা ধন্যবাদ রেআমার সব ব্যথা সেদিন সেই নাপাগুলোই দূর করে দিয়েছেশুধু দূর করতে পারেনি আমার একতরফা ভালোবাসা” 

এর কয়েকবছর পর দেখা যায় মিমের বিয়ে হয় একটা ভালো সম্ভ্যান্ত পরিবারে আর সেই ছেলেটাই ছিল রায়হানতারা দুজনে সুখে সংসার করতে রাখলশুধু থেকে গেল মিমের প্রতি সেই এক তরফা ভালোবাসা

===সমাপ্ত===

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফেসবুক ডিজেবল আইডি ফিরে পাওয়ার উপায়

মায়া 💔

ভালোবাসা নাকি ঘৃণা